প্রতীক প্রাণী : রুই মাছ (Labeo rohita)
বাংলাদেশের তিনটি (রুই, কাতলা ও মৃগেল) বড় কার্প জাতীয় প্রজাতির মধ্যে রুই মাছ (Labeo rohita) । স্বাদুপানির চাষযোগ্য, সুলভ, জনপ্রিয় ও প্রোটিন সমৃদ্ধ সুস্বাদু মাছ। এটি একটি দ্রুত বর্ধনশীল মাছ এবং স্বাভাবিক অবস্থায় খামারে বছরে ৩৫-৪৫ সেন্টিমিটার (১-১.৫ ফুট) লম্বা, ৭০০- ৮০০ গ্রাম ওজনবিশিষ্ট হয় । কিন্তু হালদা নদীর রুইয়ের পোনার বৃদ্ধি ২-২ কেজি পর্যন্ত বাড়ে।
বসতি (Habitat) : রুই মাছ ইন্ডিয়া (মূল ভূখন্ড), পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও মায়ানমারের নদীতন্ত্রের প্রাকৃতিক প্রজাতি। স্বাদুপানির পুকুর, নদী, হ্রদ ও মোহনায় পাওয়া যায়। বাংলাদেশে বিভিন্ন বড় নদীতে বিচরণ করে, ডিম ছাড়ার সময় প্লাবনভূমিতে প্রবেশ করে। স্বাদ, সহজ চাষপদ্ধতি ও অর্থনৈতিক গুরুত্বের কারণে ও পুষ্টি ঘাটতি মেটাতে শ্রীলংকা, নেপাল, চায়না, রাশিয়ান ফেডারেশন, জাপান, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া এবং আফ্রিকান দেশগুলোতে রুই মাছের চাষ হচ্ছে। ইন্ডিয়ান আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের মিঠাপানির নদীতেও অনুপ্রবেশিত রুইয়ের সফল চাষ হচ্ছে।
স্বভাব (Habit) : জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে রুইয়ের পছন্দের আহার হচ্ছে প্ল্যাংকটন জাতীয় (প্রাণিপ্ল্যাংকটন ও উদ্ভিদপ্ল্যাংকটন) জীব। আঙ্গুলী দশায় প্রাণিপ্ল্যাংকটন গ্রহণ করলেও ডেসমিড, ফাইটোফ্ল্যাজেলেট (phytoflagellate), শৈবাল রেণু (algal spore) প্রভৃতিও গ্রহণ করে । তরুণ ও পূর্ণবয়স্ক মাছ পানির মাঝ স্তরের শৈবাল ও নিমজ্জিত উদ্ভিদ বেশি গ্রহণ করে (অর্থাৎ প্রধানত শাকাশী)। পৌষ্টিকনালিতে পচনশীল জৈব পদার্থ ও বালু, কাদা প্রভৃতি দেখে তলদেশি খাদকও মনে হয় খুঁটে খাওয়ার উপযোগী নরম ঝালরযুক্ত ঠোঁট এবং মুখ-গলবিলীয় অঞ্চলে দাঁতের বদলে সব রোগ ধারাল কর্তন আল (edge) দেখে বোঝা যায় রুই মাছ নরম জলজ উদ্ভিদ আহার করে। ফুলকায় সরু চুলের মতো ফুলকা-রেকার (gill-raker) দেখে প্রমাণ পাওয়া যায় এ মাছ অতিক্ষুদ্র প্ল্যাংকটনও ছেঁকে খায় । মাছের পোনাগুলো ঝাঁক বেঁধে চলে, বয়স্ক মাছ পৃথক জীবন অতিবাহিত করে। রুই মাছ ১৪° সেলসিয়াসের নিচের তাপমাত্রায় বাঁচতে পারে না।
রুই মাছের শ্রেণিতাত্ত্বিক অবস্থানঃ
Phylum : Chordata
Sub-Phylum : Vertebrata
Class: Actinopterygii
Order: Cypriniformes
Family: Cyprinidae
Genus: Labeo
Species: Labeo rohita
রুই মাছের বাহ্যিক গঠনঃ রুই (Labeo rohita) একটি অস্থিময় মাছ। এর দেহ অনেকটা মাকু আকৃতির অর্থাৎ মধ্যভাগ চওড়া ও দুই প্রান্ত ক্রমশ সরু। প্রস্থ অপেক্ষা উচ্চতা বেশি, প্রস্থচ্ছেদ ডিম্বাকার। রুই মাছ চলনের সময় পানির ভিতর গতি বাধাপ্রাপ্ত হয় না, তাই এ ধরনের আকৃতিকে স্ট্রিমলাইন্ড (streamlined) বলে। একটি রুই মাছ সর্বোচ্চ ২০০ সে.মি. পর্যন্ত লম্বা হতে পারে, সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে এবং ওজন সাধারণত ৪৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে বলে জানা গেছে। রুই মাছের দেহ তিন অংশে বিভক্ত, যথা-
ক. মাথা (Head):
এই মাছের দেহের অগ্রপ্রান্ত থেকে কানকোর পশ্চাৎপ্রান্ত পর্যন্ত অংশটি মাথা, যা ৪-৫ ইঞ্চি লম্বা ও পৃষ্ঠভাগ উত্তল কিন্তু উদর থেকে মস্তকের উপরিভাগ বেশি উত্তল।তুণ্ড (snout) হচ্ছে নাক, মুখ এবং চোয়াল সমন্বিত মুখের বর্ধিত অংশ, এটি ভোঁতা, নিচু, কিন্তু চোয়ালের সামনে বাড়ানো এবং কোনো পার্শ্বীয় খণ্ডবিহীন। এই মাছের রয়েছে অর্ধচন্দ্রাকার মুখ, যা নিচের দিকে উপপ্রান্তীয়ভাবে অবস্থিত ও মোটা ঝালরের মতো ঊর্ধ্ব, আড়াআড়ি বিস্তৃত ও নিম্নোষ্ঠ আবৃত। এর ঊর্ধ্বচোয়ালের পিঠের দিকে একজোড়া নরম ও ছোট ম্যাক্সিলারি বার্বেল (maxillary barbels) রয়েছে। মাছের তুণ্ডের পৃষ্ঠদেশে দুচোখের একটু সামনে রয়েছে একজোড়া নাসারন্ধ্র (nostrils)। এদের প্রত্যেক নাসারন্ধ্রের পেছনে এবং মাথার দুপাশে একটি করে বড় গোল চোখ রয়েছে। চোখে পাতা থাকে না, কিন্তু কর্ণিয়া স্বচ্ছ ত্বকীয় আবরণে আবৃত। এর মাথা আঁইশবিহীন দেহকাণ্ড ও লেজ মিউকাসময় সাইক্লয়েড (cycloid) আঁইশে আবৃত।
মুখ: এই মাছের মুখ নিচের দিকে অবস্থিত, মুখের দুই কোনা পিছনের দিকে বাঁকা হওয়াতে মুখ অর্ধচন্দ্রাকার এবং থুঁতনি ভোঁতা, নিচু, কদাচিৎ স্ফীত। মুখের নিচে ও উপরে ঝালরের মত ঠোঁট আছে। থুঁতনির পৃষ্ঠদেশের চোখের সামান্য সম্মুখে একজোড়া নাসারন্ধ্র আছে।
চোখ: মাথার দুই পাশে ১ টি করে মোট ২ টি বড় বড় চোখ আছে। চোখে কোন পাতা নেই, কর্নিয়া স্বচ্ছ চামড়ার আবরণ দ্বারা আবৃত।
খ. দেহকান্ড (Trunk):
কানকোর শেষ ভাগ থেকে পায়ু পর্যন্ত দেহের মধ্য অংশটি দেহকাণ্ড। এ অংশটি চওড়া এবং বিভিন্ন ধরনের পাখনা (fin) বহন করে। পাখনাগুলো পূর্ণ বিকশিত এবং অস্থিময় পাখনা-রশ্মি (fin rays) যুক্ত। দেহকান্ডের পশ্চাৎপ্রান্তের অঙ্কীয় দিকে ঠিক মাঝ বরাবর তিনটি ছোট ছিদ্র থাকে: প্রথমে পায়ুছিদ্র, মাঝে জননছিদ্র এবং সবশেষে রেচনছিদ্র।
রুই মাছের পাখনাসমূহ (Fins):
মাছের চলনাঙ্গকে পাখনা বলে। পাখনা সাধারণত চাপা ও পাখনা-রশ্মিযুক্ত। পাখনার ভিতরে অবস্থিত সমান্তরালভাবে সজ্জিত সূক্ষ্ম শলাকার অস্তঃকঙ্কালকে পাখনা রশ্মি (fin rays) বলে। রুই মাছে মোট পাঁচ ধরনের পাখনা দেখা যায়-
পৃষ্ঠপাখনা (Dorsal fin) : এই মাছের দেহকাণ্ডের মাঝ বরাবরের পিছনে বড়, কিছুটা রম্বস আকারের একটি মাত্র পৃষ্ঠ পাখনা রয়েছে । এর উপরের দিকের মধ্যভাগ অবতল এবং এখানে ১৪-১৬টি পাখনা-রশ্মি থাকে।
বক্ষ-পাখনা (Pectoral fin) : কানকোর ঠিক পেছনে দেহকান্ডের সম্মুখ পার্শ্বদিকে একজোড়া বক্ষ-পাখনা আছে। এবং প্রত্যেক পাখনাতে ১৭-১৮টি পাখনা রশ্নিযুক্ত থাকে।
শ্রোণি-পাখনা (Pelvic fin) : বক্ষপাখনার সামান্য পেছনে একজোড়া শ্রোণি পাখনা অবস্থিত এবং এটি ৯টি করে পাখনা-রশ্মিযুক্ত।
পায়ু-পাখনা (Anal fin) : পায়ুর ঠিক পিছনে দেহের অঙ্কীয়দেশের মধ্যরেখা বরাবর একটি পায়ু-পাখনা থাকে। এটি ৬-৭টি পাখনা-রশ্মিযুক্ত।
পুচ্ছপাখনা (Caudal fin) : লেজের পশ্চাতে অবস্থিত পাখনাটি পুচ্ছ-পাখনা। এতে আছে ১৯টি পাখনা-রশ্মি। পুচ্ছ-পাখনা রুই মাছের চলাচলে এবং অন্যান্য পাখনা দেহের ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করে। দেহের দু’পাশে এক সারি ছোট গর্ত আছে যা আঁইশের নিচে অবস্থিত একটি লম্বা খাদের সঙ্গে যুক্ত। এ খাদ ও গর্তের সমন্বয়ে মাছের পার্শ্বরেখা অঙ্গ (lateral line organ) গঠিত হয়। এতে অবস্থিত সংবেদী কোষ পানির তরঙ্গ থেকে পানির গুণাগুণ সংক্রান্ত রাসায়নিক সংবেদ গ্রহণ করে।
গ. লেজ (Tail) :
পায়ুর পরবর্তী অংশটি লেজ। এর শীর্ষে রয়েছে হোমোসার্কাল (homocercal) ধরনের পুচ্ছ-পাখনা। এটি উল্লম্বতলে (vertical plane) প্রসারিত এবং পিছনে, উপরে ও নিচে দুটি প্রতিসম বাহ্যিক খণ্ডে বিভক্ত। ডার্মাল রশ্মিগুলো উপরে ও নিচের খণ্ডে বড়, মাঝখানে ছোট।
রুই মাছের আঁইশের বৈশিষ্ট্য (Scales):
• রুই মাছের দেহকাণ্ড ও লেজ মিউকাসময়
• সাইক্লয়েড (cycloid) ধরনের (কারণ গোলাকৃতি) আঁইশ দ্বারা আবৃত।
• আঁইশ পাতলা, প্রায় গোল ও রূপালি চকচকে হয়ে থাকে।
• পৃষ্ঠদেশীয় আঁইশের কেন্দ্র লালচে প্রান্ত কালো রংয়ের হয় এবং কেন্দ্রটি লালচে রং জনন ঋতুতে আরও গাঢ় ও উজ্জ্বল হয়। এছাড়াও জলচর উদ্ভিদসমৃদ্ধ পরিবেশের এর পৃষ্ঠদেশের রং লালচে-সবুজ হতে পারে।
• এখানে আঁইশে এককেন্দ্রিক বৃত্তাকার স্তরে স্তরে অস্থি-উপাদান জমা হওয়ার কারণে আঁইশের উপরের অংশে বৃত্তাকার উঁচু আল ও নিচু খাদ সৃষ্টি হয়। এই স্তরগুলোর কেন্দ্রটিকে ফোকাস (focus) বলে। এটি সাধারণত একপাশে থাকে।
• উঁচু আলগুলোকে সার্কুলাস (বহুবচনে সার্কুলি) বা বৃদ্ধিরেখা বলে। এগুলোর সাহায্যে বাৎসরিক বৃদ্ধির এবং বিভিন্ন ঋতুতে বৃদ্ধি সম্বন্ধে প্রকৃত ধারণা পাওয়া যায়।
• রুই মাছের আঁইশের বৃদ্ধি সাধারণত বসন্তকালে ও গ্রীষ্মে বেশি হয়।
• আঁইশের সম্মুখভাগ তন্তুময় যোজক টিস্যু-নির্মিত এবং ডার্মিসের পকেটের মধ্যে প্রবিষ্ট থাকে। পশ্চাৎভাগ ডেন্টিন- নির্মিত ও উন্মুক্ত।
• স্পষ্ট বৃদ্ধিরেখা ও অনেক রঞ্জক কোষ এই উন্মুক্ত অংশে থাকে। এছাড়া এই আঁইশগুলো পরস্পরকে আংশিক ঢেকে লম্বালম্বি ও কোণাকুণি সারিতে বিন্যস্ত থাকে।
• আঁইশগুলো সবসময় মিউকাসের পাতলা পিচ্ছিল আস্তরণ দিয়ে আবৃত থাকে। এবং এর মাথার দুই পাশে ৪ জোড়া ফুলকা রয়েছে
Labeo rohita-র রক্ত সংবহনতন্ত্রঃ
রক্তবাহিকা সমৃদ্ধ এবং হৃৎপিণ্ড দিয়ে নিয়ন্ত্রিত যে তন্ত্রের মাধ্যমে রক্ত দেহের বিভিন্ন অংশে সঞ্চালিত হয় তাকে রক্ত সংবহনতন্ত্র বলে। রুই মাছের রক্ত লাল। এটি রক্তরস (plasma) ও রক্তকণিকা (blood corpuscles) নিয়ে গঠিত। রক্তকণিকা দুধরনের-লোহিতকণিকা ও শ্বেতকণিকা। লোহিতকণিকা প্রায় ডিম্বাকার ও নিউক্লিয়াসযুক্ত। শ্বেতকণিকগুলো দেখতে অ্যামিবার মতো (amochoid)।
হৃৎপিণ্ড, ধমনি, শিরা ও কৈশিকনালির সমন্বয়ে Labeo-র রক্ত সংবহনতন্ত্র গঠিত।
রুই মাছের হৃৎপিন্ডঃ
রুই মাছের ফুলকাদুটির পিছনে পেরিকার্ডিয়াল গহবর (pericardial cavity) নামে এক বিশেষ ধরনের গহ্বরে হৃৎপিন্ড অবস্থান করে।
পেরিকার্ডিয়াম (pericardium) নামক আবরণে হৃৎপিন্ডটি আবৃত থাকে।
অন্যান্য মাছের মতে রুই মাছের হৃৎপিন্ডটিও দুই প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট একটি অলিন্দ বা অ্যাট্রিয়াম (atrium) এবং অন্যটি নিলয় বা ভেন্ট্রিকল (ventricle)।
এছাড়া সাইনাস ভেনোসাস (sinus venosus) নামে একটি উপপ্রকোষ্ঠ রয়েছে।
সাইনাস ভেনোসাস: এটি পাতলা প্রাচীরবিশিষ্ট উপপ্রকোষ্ঠ যা হৃৎপিণ্ডের পৃষ্ঠদেশে অবস্থিত এবং সাইনো-অ্যাট্রিয়াল (sino-atrial) ছিদ্রপথে অ্যাট্রিয়ামের সাথে যুক্ত। এ পথে শিরা থেকে সংগৃহীত CO2 সমৃদ্ধ রক্ত অ্যাট্রিয়ামে প্রবেশ করে।
ভেন্ট্রিকল (নিলয়): এটি হৃৎপিন্ডের সর্বশেষ প্রকোষ্ঠ। পেরিকার্ডিয়াল গহ্বরের অঙ্কীয়দেশে অবস্থিত এ প্রকোষ্ঠটির প্রাচীর পুরু ও মাংসল এবং সম্মুখে বাল্বাস আর্টারিওসাস (bulbus arteriosus)-তে উন্মুক্ত।
বাল্বাস আর্টারিওসাস: রুই মাছের হৃৎপিণ্ডে কোনাস আর্টারিওসাস (conus arteriosus) নেই। তার পরিবর্তে বাল্বাস আর্টারিওসাস নামক একটি গঠন দেখা যায় যা মূলত ডেট্রাল অ্যান্ডর্টার ক্ষীত গৌড়াদেশীয় অংশ। এটি হৃৎপিন্ডের কোন অংশ নয়। এটি হৃৎপিণ্ড থেকে ভেন্ট্রাল অ্যাওর্টায় রক্ত চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে।
রুই মাছের হৃদপিন্ডের কপাটিকাসমূহ (Valves):
হৃৎপিন্ডের উপপ্রকোষ্ঠ প্রকোষ্ঠগুলোর সংযোগ ছিদ্রে কপাটিকা (valve) থাকে। কপাটিকাগুলো শুধু সামনের দিকে খুলে, ফলে রক্তের পশ্চাৎগতি রুদ্ধ হওয়ায় রক্তের প্রবাহ থাকে একমুখী। বিপরীত প্রবাহে কপাটিকাগুলো বাধা দেয়। রুই মাছের হৃৎপিন্ডে নিচে বর্ণিত কপাটিকাগুলো পাওয়া যায়–
সাইনো-অ্যাট্রিয়াল কপাটিকা (sino-atrial valve): সাইনাস ভেনোসাস ও অ্যাট্রিয়ামের মাঝে অবস্থিত ছিদ্রপথে এ কপাটিকা থাকে।
অ্যাট্রিও ভেন্ট্রিকুলার কপাটিকা (Atrio-ventricular valve): অ্যাট্রিয়াম ও ভেন্ট্রিকলের মাঝে অবস্থিত অ্যাট্রিও-ভেন্ট্রিকুলার ছিদ্রপথে এ কপাটিকা অবস্থান করে।
ভেন্ট্রিকুলো-বাল্বাস কপাটিকা (Ventriculo-bulbus valve): এটি ভেন্ট্রিকল ও বাল্বাস অ্যাওর্টার মাঝে অবস্থিত কপাটিকা।
হৃৎপিণ্ডের মাধ্যমে রক্ত সংবহন (Blood circulation through heart):
সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে হৃৎপিণ্ড রক্ত পরিবহন করে। কপাটিকাসমূহের নিয়ন্ত্রণের ফলে হৃৎপিণ্ডের প্রকোষ্ঠগুলোর মধ্যে রক্ত সংবহনের একমুখিতা দেখা যায় এবং এ ধরনের হৃৎপিণ্ডকে এক চড় হৃৎপিণ্ড (single circuit than) বলে। হৃৎপিণ্ডের মধ্য দিয়ে কেবল CO2-সমৃদ্ধ রক্ত বাহিত হয় বলে রুই মাছের হৃৎপিণ্ডকে ভেনাস হার্ট (venous heart) বা শিরা হৃৎপিণ্ড বলা হয়ে থাকে।
হৃৎপিণ্ড থেকে CO2-সমৃদ্ধ রক্ত একমুখী প্রবাহে O2 সমৃদ্ধ হওয়ার জন্য ফুলকায় প্রেরিত হয়। একটি ছন্দময় তালে হৃৎপিণ্ডের বিভিন্ন অংশ নির্দিষ্ট সময় অন্তর সংকুচিত হয়। প্রথমে সাইনাস ভেনোসাসে সঙ্কোচন ঘটে। পরে ক্রমে অ্যাট্রিয়াম, ভেন্ট্রিকল ও বাল্বাস আর্টারিওসাস সংকুচিত হয়। হৃৎপিণ্ডের প্রতিবার সঙ্কোচনকে সিস্টোল (systole) বলে। সিস্টোলের পরপরই হৃৎপিণ্ড প্রসারিত হয়ে পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে। হৃৎপিণ্ডের প্রসারণ প্রক্রিয়াকে বলে ডায়াস্টোল (diastole)। হৃৎপিণ্ডের বিভিন্ন কপাটিকা রক্তের একমুখী প্রবাহ নিশ্চিত করে ।
রুই মাছের ধমনিতন্ত্র (Arterial System):
রুই মাছের ধমনিতন্ত্র প্রধানত অন্তর্বাহী (afferent) ও বহির্বাহী (efferent) ব্রাঙ্কিয়াল ধমনি নিয়ে গঠিত।
হৃৎপিণ্ডের ভেন্ট্রিকল থেকে ভেন্ট্রাল অ্যাওর্টা (অঙ্কীয় মহাধমনি) সৃষ্টি হয়ে সামনের দিকে বিস্তৃত। এ ধমনির গোড়া স্ফীত হয়ে NOTE আর্টারিওসাস গঠন করে। এটি হৃৎপিন্ড থেকে ভেন্ট্রাল অ্যাওর্টায় রক্তের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। ভেন্ট্রাল অ্যাওটা থেকে যেসব পার্শ্বীয় রক্তনালি পথে CO2 -সমৃদ্ধ রক্ত দুপাশের ফুলকায় বাহিত হয় সেগুলো অন্তর্বাহী ব্রাঙ্কিয়াল ধমনি।
ফুলকা CO2-সমৃদ্ধ রক্ত O2 -সমৃদ্ধ হওয়ার পর যে পার্শ্বীয় নালিগুলো দিয়ে ঐ রক্ত ডার্সাল অ্যাওটা (পৃষ্ঠায় মহাধমনি) তে বাহিত হয় সেগুলো বহির্বাহী ব্রাঙ্কিয়াল ধমনি।
ক. অন্তর্বাহী ব্রাঙ্কিয়াল ধমনি (Afferent Branchial Anery):
বাল্বাস অ্যার্টারিওসাস থেকে সৃষ্ট ভেন্ট্রাল অ্যাওর্টা বা অঙ্কীয় মহাধমনির প্রতিপাশ থেকে ৪টি করে মোট ৪ জোড়া অন্তর্বাহী ব্রাঙ্কিয়াল ধমনি বের হয়। ১ম জোড়া ধমনি প্রথম ফুলকা-জোড়ায় প্রবেশ করে। অনুরূপভাবে, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ জোড়া ধমনি যথাক্রমে ২য়, ৩য় ও ৪র্থ ফুলকা-জোড়ায়
CO2 সমৃদ্ধ রক্ত বহন করে।
খ. বহির্বাহী ব্রাঙ্কিয়াল ধমনি (Efferent Branchial Artery):
চার জোড়া ফুলকা থেকে চার জোড়া বহির্বাহী ব্রাঙ্কিয়াল ধমনির সৃষ্টি হয়। প্রথম বহির্বাহী ধমনি অঙ্কীয়দেশে হাইঅয়েড আর্চের সিউডোব্রাঙ্কে রক্ত বহন করে এবং সিউডোব্রায়ের সম্মুখে অপথ্যালমিক ধমনি (ophthalmic artery) হিসেবে বিস্তৃত হয়। প্রতি পাশের ১ম ও ২য় বহির্বাহী ব্রাঙ্কিয়াল ধমনি মিলে লম্বালম্বি পার্শ্বীয় ধমনি বা ল্যাটেরাল অ্যাওর্টা (lateral aorta) গঠন করে।
৩য় ও ৪র্থ বহির্বাহী ব্রাঙ্কিয়াল ধমনি ল্যাটেরাল আওর্টায় উন্মুক্ত হওয়ার আগে একত্রে মিলিত হয়। ল্যাটেরাল অ্যাওর্টা সম্মুখে ক্যারোটিড ধমনিরূপে বিস্তৃত হয় এবং করোটিকার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। দুপাশের ল্যাটেরাল অ্যাওর্টা পশ্চাতে একীভূত হয়ে ডর্সাল অ্যাওর্টা (dorsal aorta) গঠন করে এবং পেছন দিকে বিস্তৃত হয়। দুই পাশের ল্যাটেরাল অ্যাওর্টা ও ক্যারোটিড ধমনি মিলে গলবিল অঞ্চলের পৃষ্ঠীয়দেশে একটি ডিম্বাকার ধমনি বলয় সৃষ্টি করে। এর নাম সারকিউলাস সেফালিকায় (circulus cephalicus)।
রুই মাছের অন্তর্বাহী ও বহির্বাহী ব্রাঙ্কিয়াল ধমনি ডার্সাল অ্যাওর্টা মেরুদণ্ডের নিচে মধ্যরেখা বরাবর লেজ পর্যন্ত প্রসারিত। যাত্রাপথে এটি নিম্নোক্ত প্রধান নালিকাগুলো সৃষ্টি করে:
সাবক্ল্যাভিয়ান ধমনি (Subclavian artery) : বক্ষপাখনা ও বক্ষচক্রের দিকে বিস্তৃত হয়।
সিলিয়াকো-মেসেস্টারিক ধমনি (Coeliance-mesenteric artery) : পাকস্থলি, অস্ত্র, যকৃত, অগ্ন্যাশয়, মলাশয় প্রভৃতি আন্ত্রিক অঙ্গে রক্ত পরিবহন করে।
প্যারাইটাল ধমনি (Parietal artery) : দেহ প্রাচীরে রক্ত সরবরাহ করে।
রেনাল ধমনি (Renal artery) : বৃক্কে রক্ত পরিবহন করে।
ইলিয়াক ধমনি (Iliac artery) : শ্রোণী-পাখনায় রক্ত পরিবহন করে।
কড্যাল ধমনি (Caudal artery): পুচ্ছে রক্ত সরবরাহ করে ।
রুই মাছের শিরাতন্ত্র (Venous System of Labeo rohita):
কৈশিক জালিকা (blood capillaries) থেকে উৎপন্ন হয়ে, যেসব রক্তনালি দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে অক্সিজেনবিহীন (deoxygenated) রক্ত সংগ্রহ করে হৃৎপিণ্ডের সাইনাস ভেনোসাসে নিয়ে আসে, সেগুলোই সম্মিলিতভাবে শিরাতন্ত্র গঠন করে। রুইমাছের শিরাতন্ত্রকে প্রধান দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
সিস্টেমিক শিরাতন্ত্র এবং
পোর্টাল শিরাতন্ত্র।
নিচে এদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো–
১. সিস্টেমিক শিরাতন্ত্র (Syntemic Venus System):
যেসব শিরার মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ বা তন্ত্র থেকে রক্ত সরাসরি হৃৎপিন্ডে ফিরে আসে সেগুলোকে সিস্টেমিক শিরা বলে। সিস্টেমিক শিরার সমন্বয়ে গঠিত হয় সিস্টেমিক শিরাতন্ত্র। এক জোড়া সম্মুখ কার্ডিনাল শিরা, এক জোড়া জুগুলার শিরা ও এক জোড়া পশ্চাৎ কার্ডিনাল শিরা রুই মাছের সিস্টেমিক শিরাতন্ত্রের প্রধান অংশ গঠন করে। শরীরের সম্মুখ অংশ থেকে সম্মুখ কার্ডিনাল শিরা ও জুগুলার শিরা রক্ত সংগ্রহ করে সে পাশের ডাক্টাস ক্যুভিয়ে (ductus cuvieri)-তে উন্মুক্ত হয়। পশ্চাৎ কার্ডিনাল শিরা দেহের পশ্চাদ্ভাগ থেকে রক্ত সংগ্রহ করে এবং সে পাশের ডাক্টাস ক্যুভিয়েতে উন্মুক্ত হয়। উভয় পশ্চাৎ কার্ডিনাল শিরা সেগমেন্টাল শিরা, রেনাল শিরা, জেনিটাল শিরা ইত্যাদি থেকেও রক্ত গ্রহণ করে। উভয় ডাক্টাস ক্যুভিয়ে হৃৎপিণ্ডের সাইনাস ভেনোসাসে মুক্ত হয়। প্রতি পাশের বক্ষ-পাখনা ও শ্রোণি-পাখনা থেকে সাবক্ল্যাভিয়ান শিরা রক্ত সংগ্রহ করে ডাক্টাস ক্যুভিয়ে-এর মাধ্যমে সাইনাস ভেনোসাসে প্রেরণ করে। এছাড়া ডান ও বাম পশ্চাৎ কার্ডিনাল শিরা কতিপয় অনুপ্রস্থ শিরা দ্বারা সংযুক্ত থাকে। এদের অনুগ্রন্থ অ্যানাস্টোমোসিস (transverse annitomosis) বলে।
২. পোর্টাল শিরাতন্ত্র (Portal system) :
কৈশিক নালিকা থেকে উৎপন্ন হয়ে অক্সিজেনবিহীন রক্ত নিয়ে হৃৎপিণ্ডে যাওয়ার পথে যে সব শিরা অন্য কোনো অঙ্গে প্রবেশ করে আবার কৈশিক নালিতে পরিণত হয়, সেগুলোকে পোর্টাল শিরা বলে। পোর্টাল শিরাগুলো নিয়ে পোর্টাল শিরাতন্ত্র গঠিত হয়।
হেপাটিক পোর্টালতন্ত্র ও রেনাল পোর্টালতন্ত্র নিয়ে রুই মাছের পোর্টালতন্ত্র গঠিত।
হেপাটিক পোর্টালতন্ত্র (Hepatic portal system) : যকৃত পোর্টাল শিরা পরিপাকতন্ত্র থেকে রক্ত সংগ্রহ করে যকতে প্রবেশ করে সেখানে শাখায় বিভক্ত হয়ে রক্ত জালক সৃষ্টি করে। যকৃত শিরা (hepatic vein) এই রক্ত জালক থেকে রক্ত সংগ্রহ করে সরাসরি সাইনাস ভেনোসাসে উন্মুক্ত হয়।
রেনাল পোর্টাল তন্ত্র (Renal portal Bystem) : দেহের লেজ অঞ্চল থেকে কডাল শিরা (caudal vein) রক্ত সংগ্রহ করে দেহকাণ্ডে প্রবেশ করে এবং দুটি শাখায় বিভক্ত হয়। ডান শাখাটি ডান পশ্চাৎ কার্ডিনাল শিরা হিসেবে সম্মুখে অগ্রসর হয়, বাম শাখাটি বৃক্কে প্রবেশ করে বিভক্ত হয়ে জালিকা সৃষ্টি করে। একে রেনাল পোর্টাল শিরা বলে। বৃক্ক থেকে রক্ত বাম পশ্চাৎ কার্ডিনাল শিরা সংহাস ক্যুভিয়ের মাধ্যমে সাইনাস ভেনোসাসে পৌঁছায়।
Labeo rohita-র শ্বসনতন্ত্র
(Respiratory system of Labeo Rohita):
Labeo একটি অস্থিময় মাছ। চারজোড়া ফুলকা (gill) এ মাছের শ্বসন অঙ্গ। এগুলো মাথার দুপাশে দুটি কানকে (opertculum)-তে আবদ্ধ ফুলকা-প্রকোষ্ঠ (branchial chamber)-এর ভিতর রক্ষিত এবং গলবিলের পার্শ্বপ্রাচীরে মেঝেয় অবস্থিত। কানকোর পশ্চাৎ কিনারা একটি পাতলা ব্রাঙ্কিওস্টেগাল ঝিল্পি (branchiostegal membrane) যুক্ত মাথার অঙ্কীয়দেশে সেঁটে থাকে। ঝিল্লিটি কতকগুলো অস্থিনির্মিত দণ্ড বহন করে। এটি কানকোকে দেহপৃষ্ঠে আটকে রেখে ফুলকা প্রকোষ্ঠ বাইরে থেকে বন্ধ রাখে, এভাবে “শ্বাস পানি” আবদ্ধ রেখে মাছকে শ্বসনে সাহায্য করে।
ফুলকার গঠন (Structure of Gill): প্রত্যেকটি ফুলকা দেখতে সুতার মতো এবং একেকটি হোলোব্রাঙ্ক (পূর্ণফুলকা), কারণ প্রত্যেক ফুলকা দুটি সদ্যৃশ অর্ধাংশ নিয়ে গঠিত। প্রত্যেক অর্ধাংশকে বলে হেমিব্রাঙ্ক (অর্ধফুলকা)। প্রত্যেক হেমিব্রাঙ্ক একসারি করে ফুলকা সদ্যৃশ (gill filament) বা ফুলকা ল্যামেলা (gill lamella) বহন করে। এগুলো গোড়ায় যুক্ত, শীর্ষে মুক্ত। প্রতিটি সদ্যৃশ এপিথেলিয়ামে আবৃত অসংখ্য অনুপ্রস্থ প্লেট বহন করে। এপিথেলিয়াম রক্ত-জালিকা সমৃদ্ধ। প্রত্যেক ফুলকা একেকটি অস্থিময় ফুলকা আর্চ (gill arch)-এ অবলম্বিত। এভাবে প্রত্যেকে আর্চে দুটি ফুলকা-সারি যুক্ত থাকে। আর্চের অন্তঃকিনারা প্রসারিত হয়ে কাঁটাযুক্ত পাতলা ফুলকা রেকার (gill raker) গঠন করে।
রুই মাছের শ্বসন প্রক্রিয়াঃ
রুই মাছে দুই ধাপে শ্বাসক্রিয়া ঘাটে শ্বাসগ্রহণ ও শ্বাসত্যাগ। এক্ষেত্রে ফুলকা প্রকোষ্ঠ চোষণ পাম্প (suction pump) হিসেবে কাজ করে।
ক. শ্বাসগ্রহণ বা প্রশ্বাস (Inspiration) : কানকোদুটি যখন উত্তোলিত হয় তখন ফুলকা প্রকোষ্ঠের মুখ ব্রাঙ্কিওস্টেগাল ঝিল্লি দিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। এতে গলবিলে একটি চোষণ-বলের সৃষ্টি হয়। ফলে মুখছিদ্র রক্ষাকারী মৌখিক কপাটিকা খুলে যায় এবং পানি মুখের ভিতর দিয়ে মুখগহহ্বরে প্রবেশ করে।
খ. শ্বাসত্যাণ বা নিঃশ্বাস (Expiration) : কানকো যখন পেশি-সংকোচনের ফলে নেমে আসে তখন গলবিল ও মুখগহবরে চাপ বেড়ে যায়। সাথে সাথেই মৌখিক কপাটিকা মুখছিদ্রকে বন্ধ করে দেয় এবং ফুলকা প্রকোষ্ঠের ছিদ্র উন্মুক্ত হয়। পানি তখন এ ছিদ্রপথেই বেরিয়ে যায়। মুখ ও গলবিলের ভিতর দিয়ে অতিক্রমের সময় স্রোতপ্রবাহ নিচে অবস্থিত ফুলকাগুলোকে ভিজিয়ে দেয়।
শ্বসনের শারীরতত্ত্ব (Physiology of respiration): অন্তর্বাহী ফুলকা ধমনি CO2-সমৃদ্ধ রক্ত বয়ে এনে ফুলকা সূত্রকের কৈশিক জালকে ছেড়ে দেয়। এসময় স্থান গ্রহণকালে নেয়া O2-সমৃদ্ধ পানি ফুলকা সূত্রকের উপর দিয়ে বয়ে গেলে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় গ্যাসীয় বিনিময় ঘটে। রত্ন পানিতে CO2 ত্যাগ করে ও পানি থেকে O2 গ্রহণ করে। O2-সমৃদ্ধ রক্ত তখন বহিঃফুলকা ধমনির সাহায্যে গৃহীত হয় এবং সারাদেহে ছড়িয়ে পড়ে।
বায়ুথলিঃ Labeo-র মেরুদণ্ডের নিচে এবং পৌষ্টিকনালির উপরে অবস্থিত পাতলা প্রাচীরবিশিষ্ট থলির নাম বায়ুথলি বা পটকা। এটি দেখতে চকচকে সাদা থলির মতো এবং বিভিন্ন ধরনের গ্যাসে (অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড) পূর্ণ থাকে । বায়ুথলিটি সম্মুখস্থ ছোট ও পেছনের বড় প্রকোষ্ঠে বিভক্ত। দুটি প্রকোষ্ঠের মাঝখানে একটি খাঁজ রয়েছে। সম্মুখ প্রকোষ্ঠ একটি সরু নল দিয়ে অন্ননালির সাথে যুক্ত থাকে । এ নলের নাম নিউম্যাটিক নালি (pneumatic duct)। এটি অন্তঃকর্ণের ওয়েবেরিয়ান অসিকলের সাথে যুক্ত থাকে। বায়ুথলির বাইরের দিক ঘনসন্নিবিষ্ট রক্তজালক সমৃদ্ধ। এর প্রাচীর দুটি স্তর নিয়ে গঠিত । বাইরের যোজক টিস্যু দ্বারা গঠিত স্তর টিউনিকা এক্সটার্না (tunica externa) এবং ভিতরে মসৃণ পেশি নির্মিত স্তর টিউনিকা ইন্টারনা (tunica interna)। বায়ুথলির অন্তঃপ্রাচীরের এপিথেলিয়াম সংলগ্ন একটি লাল বর্ণের গ্যাস গ্রন্থি থাকে। গ্রন্থিতে ঘনসন্নিবিষ্ট অসংখ্য কৈশিকনালি দেখা যায় যাদের রেটিয়া মিরাবিলিয়া (retia mirabilia) বলা হয় । সামনের প্রকোষ্ঠের এ গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত গ্যাস দ্বারা বায়ুথলি পূর্ণ হয়। কিন্তু পেছনের প্রকোষ্ঠে বিদ্যমান এ গ্রন্থি গ্যাস শোষণ করে।
বায়ুথলির কাজঃ
*বায়ুথলি প্লবতারক্ষাকারী অঙ্গ হিসেবে কাজ করে।
বায়ুথলির প্রাচীরে অবস্থিত কৈশিকনালি থেকে বায়ুথলিতে অতিরিক্ত গ্যাস সরবরাহ করে।
* বায়ুথলি মাছের আপেক্ষিক গুরুত্ব নিয়ন্ত্রণ করে পানির নিচে স্থির থাকতে সাহায্য করে।
* মাছ বায়ুথলি দ্বারা শব্দ গ্রহণ করতে পারে। বায়ুথলির সাথে ওয়েবেরিয়ান অসিকল (weberian ossicles) এর মাধ্যমে অন্তঃকর্ণের সংযোগ থাকে । শব্দ তরঙ্গ বায়ুথলি হতে ওয়েবেরিয়ান অর্সিকলের মাধ্যমে অন্তঃকর্ণে প্রবেশ করে।
* অনেক মাছের বায়ুথলি শব্দ উৎপাদনেও সক্ষম ।
* অক্সিজেনের আধার হিসেবেও বায়ুথলি ব্যবহৃত হয়।
রুই মাছের প্রজনন ও জীবনবৃত্তান্তঃ (Reproduction and Life-history):
প্রজনন তন্ত্র (Reproductive system) : জনন ঋতুতে জনন অঙ্গ বা গোনাড (gonad) পূর্ণ বিকশিত হয়। পুরুষ মাছে একজোড়া লম্বা শুক্রাশয় (testis) ও স্ত্রী মাছে একজোড়া লম্বা ডিম্বাশয় (ovary) পটকার নিচে উদরীয় গহ্বরের পিছনে শায়িত। শুক্রাশয় পেরিটোনিয়ামের ভাঁজ মেসোৱকিয়াম (mesorchium) পর্দা দিয়ে দেহপ্রাচীরে ঝুলানো থাকে। ডিম্বাশয় পেরিটোনিয়ামের ভাঁজ মেসোভেরিয়াম (mesovarium) দিয়ে দেহপ্রাচীরে ঝুলানো থাকে। প্রত্যেক শুক্রাশয় থেকে একটি করে শুক্রনালি সৃষ্টি হয়। দুটি শুক্রাশয়ের দুটি শুক্রনালি পেছন দিকে এক হয়ে রেচনজনন রন্ধ্র পথে বাইরে মুক্ত। স্ত্রী মাছ ডিম্বাশয় জোড়া আকারে বড় ডিম্বনালিহীন। পরিপক্ক ডিম্বাশয় থেকে জনন ঋতুতে ডিম দেহগহ্বরে মুক্ত হয়। এখান থেকে ডিম রেচন-জনন সাইনাসের প্রাচীর থেকে অস্থায়ী এজাড়া জনন রন্ধ্র (genita apernure)- পথে দেহের বাইরে বেরিয়ে যায়। রুই মাছের ডিম প্রচুর কুসুম (yolk) সমৃদ্ধ।
প্রজনন (Reproductive) : রুই মাছ সাধারণত দুবছর বয়সে জননক্ষম হয়ে ওঠে। জনন ঘটে স্রোতযুক্ত নদীর পানিতে, বন্ধ পানিতে নয়। বাংলাদেশে আগে ৩ বছর বয়সে জননক্ষম হতো। কিন্তু অন্তঃপ্রজননের (incoding) কারণে এখন রুই মাছে এক বছর বয়সেই জনন ঘটে। জুন-জুলাই মাসের দিকে এরা প্রজননের জন্য তৈরি হয়। সাধরণত স্ত্রী মাছ ৫১-৭০ সেমি এবং পুরুষ মাছ ৬৫ সেমি লম্বা হলে প্রজননের জন্য তৈরি হয়। এ মাছ প্রতি কেজি দেহ ওজনের জন্য এক লক্ষ থেকে চার লক্ষ ডিম উৎপাদন করে থাকে।
নিষেক (Fertilization) : নদীর পানি যখন ফুলে ওঠে তখন রুই মাছ নদীর অগভীর অংশে প্রবল বর্ষণের মধ্যে ঝাঁক বেঁধে ডিম ছাড়তে উদ্বুদ্ধ হয়। প্রজননের সময় নদীর পানির তাপমাত্রা ২৭-৩০°
সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে।এসময় পানিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন থাকে এবং পানি ঘোলা থাকে। স্ত্রী মাছ প্রথমে পানিতে ডিম (egg) ছাড়লে পুরুষ মাছ তার উপর বীর্য (sperm) ছড়িয়ে দেয়। রুই মাছের নিয়ে দেহের বাইরে নদীর পানিতে সম্পন্ন হয় বলে একে বহিঃনিষেক (extermal fertilization) বলে। নিষিক্ত ডিমকে জাইগোট বলে।
রুই মাছের জীবন চক্র (Life cycle of Labeo Rohita):
জাইগোট সৃষ্টির ৩০-৪৫ মিনিট পরই ক্লিভেজ শুরু হয়। ক্লিভেজ মেরোব্লাস্টিক ধরনের। কোনো প্রাণীর ডিমে যখন ভেজিটাল পোলে (মেরুতে) বেশি পরিমাণে কুসুম থাকায় সম্পূর্ণ ডিমটি ক্লিভেজ প্রক্রিয়ায় বিভক্ত হতে পারেনা তখন নিষিক নিউক্লিয়াসটি কুসুমের পৃষ্ঠতলে একটি ক্ষুদ্র অংশে আশ্রয় নিয়ে ক্লিভেজের প্রস্তুতি নেয়। অংশটি ক্রমশ একটি ছোট ঢিবির মতো দেখায়। এ অংশের ভিতর ক্লিভেজ ঘটে। এ ধরনের ক্লিভেজকে মেরোব্লাস্টিক ক্লিভেজ (meroblastit cleavage) বলে।
ক্লিভেজ শুরু হওয়ার পর নিউক্লিয়াসটি ২, ৪, ৮, ১৬, ৩২ এমন সংখ্যক কোষে বিভক্ত হতে থাকে। ক্লিভেজের ফলে সৃষ্ট প্রতিটি কোষকে ব্লাস্টোমিয়ার (blastomere) বলে। ভ্রূণটি এসময় এক থোকা আঙ্গুরের মতো দেখায়। এর নাম মরুলা (morula)। ভ্রূণের পরিস্ফুটনের ক্ষেত্রে মরুলা ধাপটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বেশি ঝাঁকুনিতে ভ্রূণ কুসুম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারে। ব্র্যাস্ট্রোমিয়ারগুলো আরও বিভক্ত ও সুশৃঙ্খল হয়ে ব্লাস্টোডার্ম (blastoderm) নামক এককোষীয় স্তরে বিন্যস্ত হয়। ক্লিভেজ এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রাস্টোমিয়ারগুলোর মাঝে একটি ফাঁপা জায়গা সৃষ্টি হয়ে বৃদ্ধি পায়। এ ফাঁপা স্থানটি হচ্ছে ব্লাস্টোসিল (blastocoel)। অগটিকে তখন ব্লাস্টুলা (blastula) বলে। ব্লাস্টোডার্মের কোষগুলো প্রথম দিকে কুসুমের উপর টুপির মতো বিন্যস্ত থাকে। কোষ বিভাজন অব্যাহত থাকায় কোষগুলো কুসুমকে ঘিরে প্রসারিত হয় এবং এক পর্যায়ে ব্লাস্টোপোর (blastopore) নামক একটি ছিদ্রপথ ছাড়া সমগ্র আবৃত হয়ে পড়ে। পরে অবশ্য ব্লাস্টোপোরও বন্ধ হয়ে যায়। ব্লাস্টুলা ধীরে ধীরে দ্বিস্তরী গ্যাস্ট্রুলা (gastrula)–য় পরিবর্তিত হয়।
গ্যাস্ট্রুলার পিছন দিক থেকে লেজ ও সামনের দিক থেকে বিভিন্ন অঙ্গের সূচনা হয়। যে প্রক্রিয়ায় গ্যাস্ট্রুলা থেকে বিভিন্ন অঙ্গ তৈরি হয় তার নাম অর্গানোজেনেসিস (organogenesis)। ভূণের মধ্যে নানা ধরনের পরিবর্তন দেখা দেয় এবং ১৫-১৮ ঘন্টার মধ্যে ডিমের ভিতর থেকে লার্ভা (larva) বেরিয়ে আসে। এ লার্ভাকে ডিমপোনা বা রেণুপোনা বলে । এমন অবস্থায় পোনা কোন খাদ্য গ্রহণ করে না এবং কুসুম থেকে পুষ্টি নেয়। লার্ভা দশার পরিবর্তনগুলো নিম্নরূপঃ
*৬ ঘন্টা পর লার্ভা মাঝে মধ্যে উপরে-নিচে নড়া-চড়া করে। কুসুমের দুই প্রাস্ত তখন সরু হয় এবং লার্ভার হৃৎপিন্ডের কুসুম থলির সামনে অবস্থান নেয়। তখন কুসুম থলি বেশ বড় থাকে। এ অবস্থায় লার্ভা পানির তলদেশে বেশ সময় কাটায় এবং কুসুম থলি থেকে পুষ্টি গ্রহণ করে।
*১২ ঘন্টা পর লার্ভার চোখের রঙ কালো হতে থাকে। ক্রোমাটোফোর উৎপন্ন হওয়ায় এমন হয়। এসময় কুসুম থলি সরু লম্বা হয়।
*২৪ ঘন্টা পর কুসুম থলির পিঠে কালো দাগ দেখা দিতে শুরু করে। লাভায় ফুলকা আর্চ দৃশ্যমান হয়। চোখ মাথার উপরে অবস্থান নেয় এবং নটোকর্ড পিছন দিকে (লেজের দিকে) ঊর্ধ্বমুখী হয়। তখন লেজ ও পায়ু-পাখনা স্পষ্ট দেখা যায়। এ সময় লার্ভা স্বচ্ছ থাকে, তবে ফ্যাকাশে হলদে রঙেরও হতে পারে।
*৩৬ ঘন্টা পর লার্ভায় বক্ষ-পাখনা ও নিচের ঠোঁট স্পষ্ট দেখা যায়। পৃষ্ঠ-পাখনায় কিছু কালো দাগ এবং পুচ্ছ-পাখনায় পুচ্ছ দণ্ড দেখা দেয়।
*৪৮ ঘণ্টা পর লার্তা কিছুটা লম্বা হয়ে ৬.০-৬.৪ মি.মি. হয়। এ সময় কুসুম থলি সামনের দিকে সামান্য উত্তল হয় এবং বায়ু থলি দেখা দেয়। লার্ভার মাথায় ক্রোমাটোফোর উৎপন্ন হতে থাকে, তাই মাথা কালো রঙ ধারণ করে। তখন ফুলকা আর্চ স্পষ্ট এবং দেহ ফ্যাকাশে হলদে রঙে পরিবর্তিত হয়।
*৭২ ঘন্টা পর লার্ভার বায়ু থলি ডিম্বাকার ধারণ করে এবং বক্ষীয় পাখনা স্পষ্ট হতে শুরু করে। পিঠের দু’পাশ উজ্জ্বল হলুদ রঙ ধারণ করে, কুসুম থলি বিলীন হয়ে যায় এবং লার্ভা দশার সমাপ্তি ঘটে। তাপমাত্রার কারণে এ সময়ের কম-বেশি হতে পারে।
*৯৬ ঘন্টা পর লার্ভার মুখ স্পষ্ট হয়ে খাদ্য গ্রহণ শুরু করে। কুসুম থলি প্রায় মিলিয়ে যায় এবং এটি ধানীপোনা বা আঙ্গুলিপোনা হিসেবে পরিচিত হয়।
*৫ দিন বয়সের পোনা ৮.০-৮.৫ মি.মি. লম্বা হয়। এ সময় লেজের কাছে লাল দাগ দেখা যায়, যা দেখে একে রুই মাছের পোনা বলে শনাক্ত করা যায়। কানকোর রেখা সুস্পষ্ট গঠিত হয়। নটোকর্ডের শেষ প্রান্ত কিছুটা বেঁকে যায় এবং পাখনাগুলোতে রশ্মি আরও স্পষ্ট হয়।
*১০ দিন বয়সে পোনার দৈর্ঘ্য হয় ১৫-১৮ মি.মি.। সবগুলো পাখনায় পূর্ণাঙ্গ সংখ্যক পাখনা-রশ্মি বিকশি হয়। নাসারন্ধ্র দেখা যায় এবং অন্তঃস্থ বিভাজন স্পষ্ট হয়।
*১৫ দিন বয়সের পোনার দৈর্ঘ্য হয় ২৩ মি.মি.। তখন মুখের দুপাশে একটি করে বার্বেল (barbel) দেখা দেয়, পায়ুর অবস্থান ও খাদ্যনালি স্পষ্ট হয়। এ অবস্থায় আঁইশ দৃশ্যমান না হলেও পোনার দৈহিক গড়ন মোটামুটি সম্পূর্ণ হয়।
*এরপর মাছটির কেবল আঙ্গিক পরিবর্তন ও আকারের পরিবর্ধন ঘটে। স্ত্রীমাছ আকারে পুরুষ অপেক্ষা বড় হয়। পূর্ণাঙ্গ স্ত্রী ও পুরুষ মাছ যৌন পরিপক্কতা লাভ করে ও প্রজননে সক্ষম হয়।
রুই মাছের প্রাকৃতিক সংরক্ষণঃ
রুই মাছ বাংলাদেশের অতিপরিচিত, সুস্বাদু ও জনপ্রিয় মাছ। এটি Cypriniformes বর্গের Cyprinidae গোত্রভু প্রজাতি। এ গোত্রের মাছগুলো কার্প জাতীয় মাছ (carps) নামে পরিচিত। বাংলাদেশে রুই ছাড়া কাতলা, মৃগেল কালিবাউস প্রভৃতি কার্প জাতীয় মাছও পাওয়া যায়। এগুলোকে বড় কার্প জাতীয় মাছ বলে। বাংলাদেশের প্রায় সব কার বড় নদী (পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, কর্ণফুলী, হালদা) ও মূল শাখা নদীতে, কাপ্তাই হ্রদ এবং বিভিন্ন হাওরে রুই মা বিস্তৃত।
বড় নদীগুলো হচ্ছে রুই মাছের প্রজনন ক্ষেত্র। মাছের খামারে লালন-পালন শেষে বাজারজাত করা হয়।গ্রীষ্ম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কালবৈশাখি ও ভরা অমাবস্যা-পূর্ণিম রুই মাছ নদীতে ডিম ছাড়ে। ডিম থেকে মাছের পোনা যখন আঙ্গুলের সমান বড় হয় (আঙ্গুলিপোনা) তখন সংগ্রহ মাছের খামারে লালন-পালন শেষে বাজারজাত করা হয়। বাংলাদেশের এসব অভ্যন্তরীণ প্রাকৃতিক উৎস ক্রমশ ক আসছে (নদী দখল, ভরাট, অপরিকল্পিত বাঁধ, দূষণ ইত্যাদি কারণে), পানির গুণগতমানও নষ্ট হচ্ছে। ফলে মায়ে জিনগত বৈশিষ্ট্যও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । হ্যাচারির মাছ কখনও প্রাকৃতিক মাছের প্রতিনিধিত্ব করে না। বিজ্ঞানীরা তাই প্রাকৃতি পরিবেশ ও রুই মাছের আবাসস্থলের যথাযথ সংরক্ষণের দিকে দৃষ্টি দিয়েছেন। অভ্যন্তরীন নদীগুলো থেকে প্রাকৃতিক মাছ পাওয়া দূরূহ হয়ে পড়েছে। এ কারণে, অন্ততঃ বিশুদ্ধ রুই মাছের সংরক্ষণে সবার নজর এখন বাংলাদেশের হল নদীর দিকে।
হালদা নদী বাংলাদেশের কেবল একমাত্র দেশি নদী নয়, এটি একমাত্র জোয়ার-ভাটার নদী যেখান থেকে মাছচাষ পোনার বদলে রুই মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করে নিয়ে যান। এসব ডিম থেকে ফোটানো পোনার বৃদ্ধি যতো দ্রুত বেশি হয় অন্য কোনো জায়গা থেকে সংগৃহীত পোনায় তা হয় না, হ্যাচারীতেতো হয়ই না। এ জন্য এক কেজি রেণুপোন দাম প্রায় ৬০ হাজার টাকা, যা দেশে ন্য জায়গার পোনার দামের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।(হালদা নদীকে তাই প্রাকৃতিজিনব্যাংক সমৃদ্ধ 'মৎস্য খনি' নামে অভিহিত করা হয। এ নদীসহ অন্যান্য স্থানে রুই মাছের প্রাকৃতিক সংরক্ষণে প্রথম কাজ হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী রুই মাছের প্রাকৃতিক বিচরণ স্থলগুলোকে মৎস্য অভয়াশ্রম ঘোষণা করা। লক্ষ ও উদ্দেশ্য এবং জলাশয় ভেদে মৎস্য অভয়াশ্রম নিচে বর্ণিত বিভিন্ন ধরনের হতে পারে।
১. মৌসুমি অভয়াশ্রম : নির্দিষ্ট প্রজাতির মাছ বছরের নির্দিষ্ট সময়ে উপযুক্ত বা নির্দিষ্ট প্রজনন ক্ষেত্রে বংশবৃদ্ধি ঘটিয়ে নির্দিষ্ট আবাসে বিচরণ করে থাকে। তাই অবাধ প্রজনন ও বিচরণের জন্য সুনির্দিষ্ট জলাশয় বছরের নির্দিষ্ট সময়ে মাছের অভয়াশ্রম হিসেবে সরকার থেকে ঘোষণা করা হয়। যেমন- হালদা নদীর মদুনা ঘাট এলাকা, কাপ্তাই লেকের লং জাদু ও বিলাইছড়ি এলাকা। এখানে হালদা নদীর সামান্য একটি অংশকে (মদুনা ঘাট এলাকা) অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে। তাও মৌসুমি অভয়াশ্রম। কিন্তু এ নদীতে সারা বছরই কম-বেশি রুই মাছের আনাগোনা দেখতে পাওয়া যায়। যেহেতু নির্দিষ্ট সময় ছাড়া অন্য সময় এ নদী অরক্ষিত থাকে তাই মানুষ গোপনে সারা বছরই মা-রুই মাছ আহরণে ব্যস্ত থাকে । অতএব বিষয়টি পর্যালোচনা করে যথাশীঘ্র সম্ভব সম্পূর্ণ হালদা নদীকে সাংবাৎসরিক অভয়াশ্রম ঘোষণা করে কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। দেশের অন্যান্য নদীতে মৌসুমি অভয়াশ্রম কার্যকর হলেও হালদা নদীকে রুই মাছের জন্য সাংবাৎসরিক অভয়াশ্রম ঘোষণা করতে হবে।
২. বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা : হালদা নদী রুই মাছের বিশুদ্ধ জিন সংরক্ষণে অবদান রেখে চলেছে।
তাছাড়া, এটি একমাত্র জোয়ার ভাটার নদী যা দেশেরই এক প্রান্তে উৎপত্তি লাভ করে দেশেরই এক স্থানে সমাপ্ত হয়েছে। জোয়ার-ভাটা সমৃদ্ধ অঞ্চল এমনিতেই খুব সমৃদ্ধ কিন্তু অত্যন্ত সংবেদনশীল অঞ্চল। সংবেদনশীলতা ধরে রাখতে পারলে রুইয়ের প্রজনন ও বিচরণ অব্যাহত থাকবে। এ কারণে হালদা নদীকে বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।